খাশোগি কেন ‘জেনেশুনে বিষপান’ করতে গেলেন?

-আহমদ রফিক
অবশেষে থলে থেকে বিড়াল বেরিয়ে এলো, এবং তা কালো বিড়াল। ঘটনা অস্বীকারের ১৭ দিন পর সৌদি আরবের শাসকপক্ষে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকা-ের স্বীকারোক্তি প্রকাশ পেল গণমাধ্যমে। তাও কায়দা-কৌশলের রাখঢাকে। অথচ শুরুতে খাশোগি হত্যার ঘটনা সরাসরি অস্বীকার করে আসছিল সৌদি আরব। তাঁকে ঠা-া মাথায় খুন করা হয় অতি নিষ্ঠুরভাবে।
প্রখ্যাত সাংবাদিক হত্যার এ ঘটনা নিয়ে দিন কয়েক মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ও সংবাদপত্র মহলে আলোড়ন। হুমকি-পাল্টা হুমকি। তাতে সংশ্লিষ্ট যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, তুরস্ক ইত্যাদি দেশ। সংবাদপত্র পাঠক বা টিভি-শ্রোতা মাত্রেরই বিস্মিত হওয়ার কথা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রকাশ্য প্রতিক্রিয়ার তীব্রতা লক্ষ করে। তাঁর সঙ্গে যথারীতি সুর মিলায় ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য। রীতিমতো প্রতিবাদী প্রতিক্রিয়া তুরস্কের। হয়তো ঘটনা ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে সংঘটিত হওয়ার কারণে। সেই সঙ্গে কিছু ভিন্ন কারণ।
সৌদি আরব ও বর্তমান বাদশাহ সালমানের ঘনিষ্ঠ মিত্র ট্রাম্প ও যুক্তরাষ্ট্র ঘটনায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে এবং খাশোগি অন্তর্ধানের ব্যাখ্যাও দাবি করেছে। শুরুতে খাশোগি ইস্যু নিয়ে সৌদি আরব বনাম যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দৃশ্যমান রাজনৈতিক টানাপড়েন বাস্তব বিচারে লোকদেখানো ঘটনা বলা যেতে পারে। গত ১৫ অক্টোবরের একটি সংবাদ শিরোনাম : ‘সৌদি আরবকে কঠিন শাস্তি দেওয়ার অঙ্গীকার ট্রাম্পের।’
সংবাদটি বানোয়াট নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিখ্যাত টিভি চ্যানেলের ‘সিক্সটি মিনিট’ অনুষ্ঠানে উল্লিখিত মন্তব্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের। ট্রাম্প-সালমান সুসম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্পের এ জাতীয় মন্তব্য সবার জন্যই বিস্ময়কর মনে হওয়ার কথা। তবে রাজনীতিমনস্ক বিচক্ষণ ব্যক্তিরা নিশ্চয়ই একে রাজনৈতিক কৌশলগত চাপ বিবেচনা করে থাকতে পারেন। পরবর্তী ঘটনা তেমন প্রমাণই দিয়েছে।
আরো এক পা বাড়িয়ে ‘যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সৌদি আরব আয়োজিত আসন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলন বয়কট করার’ ইঙ্গিতও রাখে। এ সবই ছিল বাহ্য নাটক। অন্যদিকে তুরস্কের কড়া অভিযোগ, জঙ্গলে খাশোগির লাশ তল্লাশি ইত্যাদি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তুর্কি শাসক এরদোয়ানকে শান্ত করতে তাঁর সঙ্গে সরাসরি টেলিফোনে কথা বলেন সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ।
আবার বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে পাল্টা হুমকি উচ্চারিত হয়েছে সৌদি আরবের পক্ষ থেকে এবং তা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের। বিশাল সৌদি তেলভা-ারজাত পেট্রো ডলারের গুরুত্বে সৌদি আরবের বরাবরই উদ্ধত আচরণ বিরোধী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে। তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের মধ্য দিয়ে নিষ্ঠুর সত্য প্রকাশ পেল জার্মানিতে স্বেচ্ছানির্বাসনে থাকা এক সৌদি যুবরাজের বক্তব্যে।
ব্রিটেনের স্বনামখ্যাত পত্রিকা ‘দি ইনডিপেনডেন্টকে দেওয়া এক বক্তব্যে পূর্বোক্ত সৌদি যুবরাজ খালেদ বিন ফারহান বলেছেন, ‘সৌদি রাজপরিবারের বিরুদ্ধে সমালোচনার পরিণাম গুম, হত্যা বা জেল-নির্যাতন।’ এ সংবাদ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত পত্রিকা ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’। এ উপলক্ষে আরো একটি সংবাদ-মন্তব্য খুবই প্রাসঙ্গিক।
এ পর্যায়ে খাশোগির অন্তর্ধান ও সম্ভাব্য হত্যাবিষয়ক প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে গিয়ে আলজাজিরার এক সাংবাদিকের মন্তব্যটি বাস্তবতাসম্মত। তাঁর ভাষায়, ‘খাশোগি যদি সত্যই খুন হয়ে থাকেন তাহলে আমি এই মেধাবী, একনিষ্ঠ ও আদর্শ সাংবাদিক ও লেখকের মৃত্যুতে গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি। তিনি তাঁর দেশকে ভালোবাসতেন এবং মাতৃভূমির বুকে সংঘটিত রাষ্ট্রীয় অন্যায়-অবিচারের যুক্তিপূর্ণ সমালোচনা করতেন।’
তাঁর বক্তব্যের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ কথাটি হলো : ‘যদি তিনি সত্যিই খুন হয়ে থাকেন, তাহলে বলতে হবে সৌদি আরব সভ্যতা-ভব্যতা ও আইন-কানুনের আরেকটি সীমা লঙ্ঘন করল।’ পেট্রো ডলারের দম্ভে এমনটিই তো স্বাভাবিক। বহু ঘটনা তার প্রমাণ। চলচ্চিত্রানুরাগীরা স্মরণ করতে পারবেন ‘ডেথ অব এ প্রিন্সেস’ ছায়াছবিতে দৃশ্যমান নৃশংসতার কথা।
দুই.
জামাল খাশোগি খাস সৌদি আরবের এক শিক্ষিত সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান, জন্ম ১৯৫৮ সালে। শিক্ষা যুক্তরাষ্ট্রে। এবং সেখানেই তাঁর সাংবাদিকতা পেশায় প্রবেশ। ক্রমে নির্ভীক সাংবাদিকতার সুবাদে খ্যাতি অর্জন। বিচিত্র ও আপাত-স্ববিরোধী তাঁর যৌবনের জীবনাচরণে। তাঁর এ স্ববিরোধিতার উৎসমূলে রয়েছে একটিই লক্ষ্য বা স্বপ্ন আধুনিক যুক্তিবাদী সৌদি আরব তথা আরবভূমি। সেটা সম্ভবত তাঁর আধুনিক কেতার শিক্ষার পরিণাম। সম্ভবত আরো একটি চিন্তা আরব দুনিয়াকে উপনিবেশবাদী প্রভাব থেকে মুক্ত দেখতে পাওয়া।
সর্বোপরি সামগ্রিক রাজনৈতিক রক্ষণশীলতার বিরোধী হওয়ার কারণে সৌদি রাজপরিবারের সঙ্গে খাশোগির সুসম্পর্কের অবসান ঘটে। তাঁর আধুনিক চিন্তা-ভাবনায় অসন্তুষ্ট সৌদি কর্তৃপক্ষ তাঁকে ‘আলওয়াতান’ পত্রিকার প্রধান সম্পাদকের পদ ছাড়তে বাধ্য করে। এর পরও তাদের সঙ্গে জামাল খাশোগির ব্যক্তিগত সম্পর্ক পুরোপুরি ছিন্ন বা নষ্ট হয়নি। তবে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো, বাদশাহ সালমানের পুত্র মোহাম্মদ বিন সালমানের প্রথাসিদ্ধ যুবরাজ ঘোষণার পর খাশোগি তাঁর জন্মভূমি মাতৃভূমি সৌদি আরব ত্যাগ করেন (২০১৭ সালে)।
প্রশ্ন উঠতে পারে কেন? এর সঙ্গে কি বহু প্রচারিত সৌদি যুবরাজদের গ্রেপ্তারের কোনো সম্পর্ক ছিল? কিংবা ক্ষমতাসীন যুবরাজের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অবনতি? তারুণ্য বা যৌবনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য উগ্রতা। এ সম্ভাবনা খারিজ করে দেওয়া যায় না। ঘটনার কিছু সময় আগে খাশোগি ‘ওয়াশিংটন পোস্টে’ লিখেছিলেন : ‘যুবরাজের অধীনে সৌদি আরব ভয়, হুমকি, গ্রেপ্তার ও প্রকাশ্য অপমানের নতুন যুগে প্রবেশ করছে’। এ ধরনের সমালোচনা ইউরো-মার্কিন বিশ্বে স্বাভাবিক বলা চলে। কিন্তু সৌদিতে তা অপরাধ।
শেষ সাক্ষাৎকারে দেখা যায়, যুবরাজের সমালোচনায় মুখর হয়েও খাশোগির অবশেষ মন্তব্য, তিনি এ মুহূর্তে সৌদি শাসকদের পতন চান না, বরং চান তাঁরা বর্তমান রক্ষণশীল সৌদি আরবকে আধুনিক রাজ্যে পরিণত করুক। আহ্বান জানান যাতে বাদশাহ-যুবরাজ মানুষের দিকে তাকান। এ জাতীয় মানবীয় সমালোচনা কি খুবই অপরাধের বিষয় ছিল যে এজন্য খাশোগির প্রাণ নিতে হবে, তাও অন্তত নিষ্ঠুরভাবে ‘জীবিত খাশোগিকে সাত টুকরা করে কেটে’।
তিন.
খাশোগি হত্যা নিয়ে এখন একাধিক প্রশ্ন, চলবে রাজনৈতিক চতুরখেলা। এরইমধ্যে খবরে প্রকাশ, গোয়েন্দা উপপ্রধান, শাসকদের প্রিয়ভাজন মেজর জেনারেল আহমেদ আল-আসিরিকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কোনো চৌকস সাংবাদিক ভাবতে পারেন, এ ঘটনা কি বড়সড় পরিসরে কোনো ‘জজমিয়া’ নাটক বা উপাখ্যান? একটি প্রাসঙ্গিক সংবাদ শিরোনাম : ‘জেনারেল আসিরি কি বলির পাঁঠা?’
এর মধ্যে একের পর এক ঘটনা ঘটেই চলেছে। তুরস্কের একটি পত্রিকার খবরে শিরোনাম ‘একজন সন্দেহভাজন হত্যাকারী শনাক্ত’। তিনি নাকি ১৫ ঘাতকের একজন। গোয়েন্দা সংস্থার কর্নেল পদমর্যাদার এই ব্যক্তির নাম মাহের আবদুল আজিজ মুতরেব। কে সঠিক, কে বেঠিক এ মুহূর্তে বলা কঠিন। তবে খেলা চলছে, চলবে। ট্রাম্প যে এ ঘটনা থেকে যতটা সম্ভব সুবিধা আদায় করে নিতে প্রস্তুত তা বলাই বাহুল্য। একে তো খ্যাতনামা সাংবাদিক হত্যা, তা আবার কনস্যুলেটে। ঘটনার গুরুত্ব সম্পর্কে কিছু বলার অপেক্ষা থাকে না।
প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না যে সৌদি আরব একটি চরম ধর্মীয় রক্ষণশীল রাষ্ট্র, নেপথ্যে ওয়াহাবি মতবাদের শক্তিতে পুষ্ট। আধুনিক বিশ্বের পুরোধা যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠতম মিত্র হয়েও সৌদি আরবের রাজনৈতিক চেতনাগত অবস্থান মধ্যযুগে। সমাজটি তাদের হাত ধরে অশিক্ষা ও গোঁড়া ধর্মীয় সংস্কারের বন্ধনে আবদ্ধ। সা¤্রাজ্যবাদী মিত্ররাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র চায় না এ অন্ধকারের আবহ কাটুক, সংস্কারের বন্ধন থেকে মুক্তি ঘটুক। ঘটলেই যত সমস্যা। সম্ভাবনা রাজতন্ত্রের পতন এবং সা¤্রাজ্যবাদবিরোধী চেতনার প্রকাশ।
বর্তমান স্বীকারোক্তির পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন : এ হত্যাকা-ের দায় বহন করবে সুনির্দিষ্টভাবে কে বা কারা, এর পরিণামই কী হবে। বিশ্বের আন্তর্জাতিক স্তরের সংবাদ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি, খাশোগি হত্যাকা-ের নায়ক সৌদি আরবকে দায়মুক্তি না দেওয়া, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে ঘাতকদের শনাক্ত করে যথাযথ শাস্তি বিধান নিশ্চিত করা। তাতে হয়তো মূল ঘটক নেপথ্যেই থাকবে, প্রাণ যাবে চুনোপুঁটিদের বা নিতান্ত নিরীহদের। যেমনটা সচরাচর ঘটে থাকে।
ক্ষুব্ধ জাতিসংঘ। জাতিসংঘ মহাসচিবের এক মুখপাত্রের ভাষ্য হলো, ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিক জামাল খাশোগির মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে গভীর হতাশা ব্যক্ত করেছেন আন্তোনিও গুতেরেস। দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তদন্তের মধ্য দিয়ে দোষীদের শাস্তির দাবি করেছেন তিনি।’
নানা সংবাদের জটিলতার মধ্যে এমন কথাও উঠে আসছে যে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানই নাটের গুরু। কারণ খাশোগির বক্তব্যে তাঁর সমালোচনাই ছিল সবচেয়ে বেশি। তাই এমন বক্তব্য বিভিন্ন সূত্রের যে তাঁর নির্দেশেই খাশোগি হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে। একটি সংবাদে বলা হয়েছে, যুবরাজের নির্দেশ ছিল, ‘হয় তাঁকে জীবিত ধরে আনো অথবা অকুস্থলেই তাঁকে হত্যা করো।’ কোনটা সত্য এখন তা দেখার অপেক্ষায় আমরা।
কিন্তু প্রশ্ন থাকে, কথিত ‘সঠিক স্বচ্ছ তদন্ত’ কি আদৌ হবে? কে করবে সে তদন্ত? সৌদি আরব যেখানে অভিযুক্ত, তাদের তদন্তে কি সত্য বেরিয়ে আসবে? কখনোই না। তাহলে? জাতিসংঘ বা অন্য কোনো সংস্থা কি এ বিচার করার অধিকার রাখে? কাজেই সম্ভাবনা রয়েছে এ হত্যাকা-ের প্রকৃত ঘাতকদের বা নেপথ্য শক্তিকে কখনো শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে না।
আর সে আশঙ্কাই উচ্চারিত হচ্ছে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার মুখপাত্রের কণ্ঠে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের জনৈক সিনিয়র উপদেষ্টার বক্তব্য : ‘সাংবাদিক খাশোগি হত্যাকা-ের বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।’ কারণ স্পষ্ট ও স্বচ্ছ তদন্ত হলে অনেক অস্বস্তিকর ঘটনা বেরিয়ে আসবে, কারো কারো মুখোশ খসে পড়বে, সৌদি আরবের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি নষ্ট হবে।
কোনো কোনো সংবাদ ভাষ্যে বলা হয়েছে, ‘মৃত জামাল খাশোগি সৌদির জন্য হুমকি।’ আমার তা মনে হয় না। কারণ মানুষ স্বাভাবিক নিয়মে বড় বিস্মৃতিপ্রবণ। জামাল খাশোগি একজন মেধাবী অনুসন্ধানী সাংবাদিক, কোনো স্বনামখ্যাত বিপ্লবী নেতা বা রাষ্ট্রনায়ক নন। তাঁর মৃত্যু-উত্তর প্রভাব সংস্কারাচ্ছন্ন সৌদি সমাজের গভীরে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। সর্বোপরি ওয়াশিংটনের বর্তমান ভূমিকা, ট্রাম্পের স্বার্থসিদ্ধির ভূমিকা তো প্রশ্নসাপেক্ষ। আমরা স্মরণ করতে পারি অনুদ্ঘাটিত কেনেডিসহ একাধিক হত্যার কথা।
এরই মধ্যেই ট্রাম্পের অবস্থান বদল। তিনি বলতে শুরু করেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের পাশে আছে।’ থাকতেই পারে। তা না হলে ইরানকে শায়েস্তা করা যাবে না। এক মৃত খাশোগির জন্য এত বড় দাঁও হারানো চলে না। যদিও খাশোগি দাবি করেছিলেন সৌদি আরবে বাক্স্বাধীনতা, স্বাধীন মতামতের প্রকাশ, এমনকি সঠিক সমালোচনার অধিকার। কিন্তু তাতে কী? স্বার্থ বড় বালাই। তাই ‘সৌদি আরবকে খেপাতে চান না ট্রাম্প।’
আপাতত শেষ তাৎপর্যপূর্ণ সংবাদ শিরোনাম (১৯-১০-২০১৮) : ‘যুক্তরাষ্ট্রকে ১০ কোটি ডলার দিল সৌদি।’ প্রকাশ্য উপলক্ষ যদিও সিরিয়া যুদ্ধ, আসলে এটা খাশোগি হত্যাকা-ের দায় মুক্তিপণ কি না তা ‘বুঝে নেবেন সাধু মহাজন’। এ পরিমাণ তো অতি সামান্য। চাপের মুখে আরো বড় পরিমাণ তহবিল আসবে যেকোনো উপলক্ষে। কাজেই ট্রাম্প কেন খাশোগিকে নিয়ে কথা বলবেন বা মাথা ঘামাবেন?
আমার একটি ক্ষুব্ধ প্রশ্ন : খাশোগি জানতেন যুবরাজের খাতায় তাঁর অবস্থান। একজন তীক্ষধী সাংবাদিকের পক্ষে তা না জানার কথা নয়। তাহলে কেন তিনি জেনেশুনে বাঘের গুহায় ঢুকতে গেলেন। প্রবেশ করলেন সৌদি কনস্যুলেটে? এ রহস্য কি কখনো জানা যাবে?
লেখক : কবি, গবেষক, ভাষাসংগ্রামী