বিশ্ববাজারে কমলেও, দেশে গমের দাম ঊর্ধ্বমুখী

বিএনএন ৭১ ডটকম
ঢাকা: বিশ্ববাজারে বর্তমানে গমের দাম তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম। কিন্তু দেশের বাজারে গমের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এমন পরিস্থিতিতে অন্যান্য সময়ে দেশীয় আমদানিকারকরা গমের আমদানি বাড়িয়ে দেন। ফলে বাড়তি সরবরাহের কারণে দেশের বাজারে গমের দাম কমে আসে। কিন্তু তার বিপরীতে গমের দাম আগের তুলনায় মণপ্রতি বাড়ার কারণ হিসাবে দেশীয় আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা গমের সরবরাহ সংকটকে দায়ি করছে। আর গমের বাড়তি দামের জের ধরে দেশে আটা ও ময়দার দামও বাড়তে শুরু করেছে। রাজধানীতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে আটা ও ময়দার দাম কেজিতে সর্বোচ্চ ২ টাকা বেড়েছে। বাজার সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গমের বাড়তি দামের কারণে আটা ও ময়দার বাজারে প্রভাব পড়ছে। দুটি পণ্যেরই দাম আগের তুলনায় বেড়েছে। এক সপ্তাহ আগেও পাইকারি বাজারে ৫০ কেজির এক বস্তা আটা ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হয়। ওই হিসাবে প্রতি কেজি আটার দাম পড়ে ২১ টাকা। কিন্তু সপ্তাহান্তে প্রতি বস্তা আটার দাম ১শ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৫০ টাকা। তাতে বর্তমানে প্রতি কেজি আটার দাম পড়ছে ২৩ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহান্তে রাজধানীর পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি আটার দাম বেড়েছে ২ টাকা। আর সপ্তাহখানেক আগেও ৫০ কেজির এক বস্তা বিক্রি হয় ময়দা ১ হাজার ৪৫০ টাকায়। ওই হিসাবে খাদ্যপণ্যটির দাম পড়েছিল কেজিপ্রতি ২৯ টাকা। এখন পাইকারি বাজারে প্রতি বস্তা ময়দা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫২০ টাকায়। অর্থাৎ পাইকারি বাজারে ময়দার কেজিপ্রতি দাম পড়ে ৩০ টাকা ৪০ পয়সা। ওই হিসাবে সপ্তাহান্তে খাদ্যপণ্যটির দাম বেড়েছে মণে ৭০ টাকা আর কেজিতে ১ টাকা ৪০ পয়সা।
সূত্র জানায়, রাশিয়াসহ কৃষ্ণসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোয় সর্বশেষ মৌসুমে বাম্পার ফলনের কারণে গত এক মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন গমের দাম মানভেদে সর্বনিম্ন ৪ ডলার ৫০ সেন্ট থেকে সর্বোচ্চ ১১ ডলার পর্যন্ত কমেছে। তবে দেশের বাজারে তার কোনো প্রভাব পড়েনি। বরং ঢাকার মৌলভীবাজারের পাইকারি আড়তগুলোতে আটা তৈরির উপযোগী প্রতি মণ গম ৯১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ এক সপ্তাহ আগেও ওই গম মণপ্রতি ৮৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ওই হিসাবে সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর পাইকারি বাজারে কৃষিপণ্যটির দাম বেড়েছে মণে ৩০ টাকা। তাছাড়া সপ্তাহখানেক আগে ময়দা তৈরির উপযোগী প্রতি মণ গম বিক্রি হয়েছিল ৯৯০ টাকায়। সপ্তাহান্তে ওই কৃষিপণ্যটির দাম মণে ৩০ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২০ টাকা। আর বাজারে গমের সরবরাহ সংকট রয়েছে এমন অজুহাতে মিল গেটেই বাড়তি দামে আটা ও ময়দা বিক্রি হচ্ছে। কোরবানির ঈদের পর থেকে কয়েক ধাপে পণ্য দুটির দাম বেড়েছে। অথচ যখন আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম কমতির দিকে রয়েছে, তখন দেশে আটা-ময়দার দাম বেড়ে যাওয়া অযৌক্তিক বলে মনে করছেন ব্যবসায়িরা।
সূত্র আরো জানায়, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত দেশে বেসরকারি পর্যায়ে ৯ লাখ ৬২ হাজার টন গম আমদানি হয়েছে। আর বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে আরো ৯৮ হাজার ২৫৫ টন গম। আরো প্রায় ১১ লাখ টন গম আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছে দেশীয় আমদানিকারকরা। আমদানি করা ওসব গম দেশের বাজারে সরবরাহ শুরু হলে বিদ্যমান দাম কমে আসতে পারে বলে খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
এদিকে দেশে গমের সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের মেসার্স সানফ্লাওয়ার মিলের স্বত্বাধিকারী ইমাম হোসেন টুটুল জানান, মুদ্রাবাজারে ডলার বেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। বিপরীতে টাকার মান আগের তুলনায় কমেছে। এমন পরিস্থিতিতে আমদানি লাভজনক নয়। মূলত ওই কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমা সত্ত্বেও দেশে গমের দাম আগের তুলনায় বাড়তি রয়েছে।